আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর ৫০ শতাংশ সদস্যকে মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। রোববার (৯ নভেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর ৫০ শতাংশ আমরা উঠাচ্ছি না। এই মুহূর্তে সেনাবাহিনী আগে যেমন ছিল তেমনই থাকবে; তাদের উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে না।’

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ঘোষিত ১৩ নভেম্বরের ঢাকা লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনো ধরনের আশঙ্কা নেই।’

এদিকে গত ৫ নভেম্বর সেনা সদর আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, দেশের জনগণের মতো সেনাবাহিনীও চায় অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী একটা অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকারের রূপরেখার মধ্যে নির্বাচনের সময়সীমাও রয়েছে।

সেনাবাহিনী প্রত্যাশা করে, নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে এবং সেনাবাহিনী তখন সেনানিবাসে ফিরে যেতে পারবে।

গত ১৫ মাস ধরে সেনাবাহিনী বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় নিয়োজিত আছে এবং অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করছে বলে ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন সেনা সদর দপ্তরের আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (জিওসি আর্টডক) জেনারেল অফিসার কমান্ডিং লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান।

তিনি বলেন, সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের যেটুকু রূপরেখা প্রণয়ন করেছে, সেটার ওপর ভিত্তি করে সেনাবাহিনী যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। সেনাবাহিনীর যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, সেটি এখন সীমিত আকারে চলছে। তার মধ্যে নির্বাচনের সময় কী করণীয় হবে, সেটাকে ফোকাসে (বিবেচনায় রেখে) প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। প্রশিক্ষণের সঙ্গে একটি বিষয় সম্পর্কিত, সেটি হলো শান্তিকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব—যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।

এক প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান বলেন, ‘আমরাও লক্ষ করেছি যে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সেনাবাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মিথ্যা, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই যে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য সেনাবাহিনীর প্রধান, সেনাবাহিনীর সিনিয়র লিডারশিপের (জ্যেষ্ঠ নেতৃত্ব) প্রতি শতভাগ অনুগত এবং বিশ্বস্ত রয়েছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় সেনাবাহিনী এখন আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ এখন আরও গভীর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে প্রচারণা, এটাকে আমরা পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের (নেতিবাচক) প্রচারণার বিরুদ্ধে কিছু করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কারণ, সেনাবাহিনীর নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। সেনাবাহিনী কী করছে, সেখানে বিস্তারিত উল্লেখ থাকে। মিথ্যাকে বিতাড়িত করার জন্য সত্যই যথেষ্ট। সত্যের মাধ্যমে এবং কাজের মাধ্যমে সেটার প্রমাণ করতে চায় সেনাবাহিনী।