জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনের তহবিলসংকটের কারণে আগামী ৯ মাসের মধ্যে অন্তত ১ হাজার ৩১৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। চলমান আর্থিক সংকটে ১৫ শতাংশ বাজেট হ্রাসের আওতায় আপৎকালীন পরিকল্পনা হিসেবে পাঁচটি মিশন থেকে বাংলাদেশের এসব শান্তিরক্ষীকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নিউইয়র্কের কূটনৈতিক সূত্র জানায়, জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রম বিভাগের মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স দপ্তর (ওএমএ) গত ১৪ অক্টোবর নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীর সংখ্যা কমানোর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে চলমান আর্থিক সংকটের কারণে সব মিশনে ১৫ শতাংশ বাজেট হ্রাস পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। এতে পোশাকধারী সদস্যদের জন্য বরাদ্দ কমানো হবে, যার প্রভাব সরাসরি জনবল হ্রাসে পড়বে।

সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ইতোমধ্যে বিষয়টি সরকারকে অবহিত করেছে।

এর আগে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমে যাওয়ায় জাতিসংঘ বিশ্বের নয়টি অঞ্চলের শান্তি রক্ষা মিশন থেকে এক-চতুর্থাংশ বাহিনী কমিয়ে আনতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়, এতে ১৩–১৪ হাজার সেনা ও পুলিশ সদস্য নিজ দেশে ফেরত যেতে পারেন।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনের বাজেট ৫৪০ কোটি ডলার হলেও যুক্তরাষ্ট্র অনুদান কমিয়ে প্রায় অর্ধেক—৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রত্যাহার পরিকল্পনা

 জাতিসংঘের চিঠি অনুযায়ী, পাঁচটি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা কমবে।

দক্ষিণ সুদানের ইউএনমিস মিশন থেকে ৬১৭ জন

মধ্য আফ্রিকার মিনুসকা থেকে ৩৪১ জন

সুদানের আবেই অঞ্চলের ইউনিসফা থেকে ২৬৮ জন

কঙ্গোর মনুসকো থেকে ৭৯ জন

পশ্চিম সাহারার মিনুরসো মিশন থেকে ৮ জন শান্তিরক্ষীকে প্রত্যাহার করা হবে।

জাতিসংঘ সদর দপ্তর ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মিশনগুলোকে বাজেট হ্রাসের পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে। লজিস্টিক ও সাপোর্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাবাসন নির্বিঘ্নে সম্পন্নের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

ওএমএর চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত কেবল আর্থিক সংকটের কারণে নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে পরিকল্পনায় পরিবর্তন এলে বাংলাদেশকে তা দ্রুত জানানো হবে।

বাংলাদেশের অবদান ও অর্জন

 বাংলাদেশ ১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক মিশনে অংশ নিয়ে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয়। বর্তমানে ১০ দেশে বাংলাদেশের ৫ হাজার ৬৯৬ শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন, যার মধ্যে ৪৪৪ জন নারী।

এ পর্যন্ত ৩৫ বছরে বিশ্বশান্তির এ অভিযানে ১৬৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী জীবন উৎসর্গ করেছেন, আহত হয়েছেন অন্তত ২৫৭ জন।

তিন দশকেরও বেশি সময়ে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ৪৩টি দেশ ও স্থানে ৬৩টি মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। এ দীর্ঘ যাত্রায় অন্তত ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৩ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুলিশ। এ পর্যন্ত ২৪টি দেশের ২৬টি মিশনে ২১ হাজার ৮১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ৩টি দেশে ১৯৯ জন পুলিশ সদস্য শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন।

সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনকালে এখন পর্যন্ত ২৪ জন বাংলাদেশি পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।