আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী—দুই দলের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এখন পর্যন্ত কোনো জোটে যাওয়ার ঘোষণা না দিলেও দলটি সম্ভাব্য আসন সমঝোতা ও রাজনৈতিক বোঝাপড়ার বিষয়ে উভয় দলের প্রতিই দরজা খোলা রেখেছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে দুই দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
দলীয় সূত্র জানায়, এনসিপি দলীয় প্রতীক এবং জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়টি সুরাহার পর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করবে। এ দুটি ইস্যু দ্রুত সুরাহা হতে পারে বলে দলের নেতাদের ধারণা। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই মাঠে তৎপরতা শুরু করেছেন—ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া এবং এলাকায় পরিচিতি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এমন সক্রিয় প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় অর্ধশত।
দলটি দেড় শতাধিক আসনের জন্য প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজ করছে। এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘জুলাই সনদ ও দলীয় প্রতীকের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হওয়ার পর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমরা ১৫০ থেকে ১৬০ জন প্রার্থীর নামসহ খসড়া তালিকা প্রকাশ করতে পারি।’
গত সেপ্টেম্বরে জুলাই সনদ নিয়ে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের বিপরীত অবস্থানের মধ্যে ৯টি দল আলোচনা শুরু করেছিল—এর মধ্যে এনসিপি, এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদও ছিল। তৃতীয় একটি জোট গঠনের কথাও আলোচনায় এসেছিল, তবে এখন সেই আলোচনা কার্যত থেমে গেছে। গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত দলগুলো বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতার পথে এগোচ্ছে।
অন্যদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী তরুণদের দল এনসিপিও বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনায় আছে। দল দুটির মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে বলে উভয় দলের সূত্র জানিয়েছে।
এনসিপির রাজনৈতিক পর্ষদের এক সদস্য জানান, বিএনপির সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনায় ২০টি আসনে ছাড় দেওয়ার বিষয় উঠে এসেছে। তাঁর ধারণা, ঢাকার অন্তত চারটি আসনে এনসিপি–বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হতে পারে। যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা ও সাভার এলাকায় এনসিপি প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে—এসব জায়গাকে দলটি তাদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এনসিপির সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে। তবে জোটবদ্ধ হব কি না, সেটা রাজনীতির মাঠেই নির্ধারিত হবে।’
অন্যদিকে এনসিপির এক শীর্ষ নেতা জানান, বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও দলের যোগাযোগ চলছে। জামায়াত এনসিপিকে কিছু আসন ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এনসিপির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। জুলাই সনদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতেই আমরা কথা বলি।’ তবে জোট বা সমঝোতার বিষয়ে তিনি বলেন, সময়ের বাস্তবতায় বিষয়টি পরিষ্কার হবে, এখনই কিছু বলা যাবে না।
এনসিপির ভেতরে বিভিন্ন মতের নেতারা আছেন। কেউ বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে জোটে যেতে চান, আবার কেউ নতুন একটি বিকল্প জোটের পক্ষে। দলটি বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ ও এবি পার্টির সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়েও আলোচনা করছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘অবস্থানগত ঐক্য হলে যেকোনো দলের সঙ্গেই জোট বা সমঝোতার বিষয়ে আমরা উন্মুক্ত। তবে এখনো কারও সঙ্গেই সুনির্দিষ্টভাবে জোটনির্ভর কোনো আলোচনা হয়নি।’
তিনি যোগ করেন, ‘জোটনির্ভর রাজনীতি বা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আমরা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। আমরা এখন পর্যন্ত সবার জন্য ওপেন রয়েছি।’
পূর্বের পোস্ট :