চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলার আসামিরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সহায়তা চেয়েছে রমনা থানা পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশ–ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ‘এই মামলার ব্যাপারে আদালতের কিছু নির্দেশনা রয়েছে, সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।’
আসামিদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে, সে ব্যাপারে আসামিদের একটি তালিকা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
মামলা দায়েরের একদিন পর, ২৩ অক্টোবর এই চিঠি পাঠানো হয় বলে জানান উপকমিশনার। তিনি বলেন, ‘আলোচিত এই মামলাটি নিয়ে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছি। বুঝে শুনে আমাদের এগোতে হচ্ছে।’
আদালতের নির্দেশে গত সোমবার রমনা থানায় মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আসামিদের দেশত্যাগের আশঙ্কাকে গুরুত্ব দিয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়।
সেদিন গভীর রাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তাঁর ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম রমনা মডেল থানায় অভিনেতার স্ত্রী সামিরা হকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আদালত আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুল ইসলাম খন্দকারকে।
এ মামলায় আসামি করা হয়েছে সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, তাঁর মা লতিফা হক লুসি, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, ডেডিড, জাভেদ, ফারুক, রুবী, আব্দুস ছাত্তার, সাজু এবং রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদকে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁদের কেউ কেউ বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন।
চলচ্চিত্র জগতে তুমুল জনপ্রিয় সালমান শাহ (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় মারা যান।
প্রথমে এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হলেও পরে সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই আদালতে আবেদন করেন।
এরপর আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি জানায়, সালমান শাহ ‘আত্মহত্যা’ করেছেন।
এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে সালমান শাহর বাবা রিভিশন মামলা করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠানো হয়।
দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সেই প্রতিবেদনে মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক জানান, হত্যার কোনো প্রমাণ মেলেনি।
এরপর মামলাটি এগিয়ে নিয়ে যান সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। তিনি ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিচার বিভাগীয় প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ‘নারাজি’ দেন এবং ১১ জনের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, তাঁরা তাঁর ছেলের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।
মামলাটি পরে র্যাব ও পরে পিবিআই তদন্ত করে। ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিবিআই তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানায়, ‘ঘটনার সময়কার সাক্ষ্য, জবানবন্দি ও আলামত বিশ্লেষণে হত্যার কোনো প্রমাণ মেলেনি।’
তাদের মতে, চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও পারিবারিক কলহ থেকে মানসিক চাপে পড়ে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেন।
ওই প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট না হয়ে নীলা চৌধুরী পুনরায় তদন্তের আবেদন করেন। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ পিবিআইয়ের প্রতিবেদন গ্রহণ করে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন।
পরে সালমান শাহর পরিবারের পক্ষ থেকে রিভিশন আবেদন করা হলে ২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত তা গ্রহণ করেন।
সম্প্রতি এ রিভিশনের শুনানি শেষ হয় গত ১৩ অক্টোবর। ২০ অক্টোবর আদালত হত্যা মামলা দায়েরের আদেশ দেন এবং নীলা চৌধুরীর রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করেন।
আদালত সালমান শাহর বাবার অভিযোগ ও আসামি রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন রমনা মডেল থানা পুলিশকে।
পূর্বের পোস্ট :