দেশে এক হাজারের বেশি পর্যটন স্থান রয়েছে। কিন্তু ভ্রমণের আনন্দের সঙ্গে খরচের হিসাবও জড়িত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামান্য পরিকল্পনা ও সচেতন সিদ্ধান্তে ভ্রমণ খরচ অনেকটাই কমানো সম্ভব।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২০ সালের ‘ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে রাত্রিযাপনসহ ভ্রমণে বছরে মোট ব্যয় ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৬ শতাংশ ব্যয় হয় পরিবহনে, আর ১৮ শতাংশ খরচ হয় কেনাকাটা ও দৈনন্দিন ব্যয়ে।
১. পরিকল্পনাই সাশ্রয়ের চাবিকাঠি
ভ্রমণের আগে পরিকল্পনা করলে খরচ কমানো যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্যুর গ্রুপগুলোর অভিজ্ঞতা দেখে গন্তব্য, যাতায়াত ও নৌকা ভাড়ার তথ্য জানা যায়। অভিজ্ঞ ভ্রমণকারীদের পরামর্শে আগেভাগে যোগাযোগ করে কম দামে নৌকা বা গাড়ি ভাড়া করা সম্ভব।
পর্যটন মৌসুমের বাইরে ভ্রমণ করলে হোটেল ও খাবারের খরচ অর্ধেকে নেমে আসে। সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে জনপ্রিয় স্থানে গেলে ভিড় কম থাকে, ফলে ছাড়ও মেলে। অনেক হোটেল বা ট্রাভেল সাইটে অনলাইনে বুকিং দিলে ব্যাংক বা ক্রেডিট কার্ড ছাড় পাওয়া যায়।
ভ্রমণবিষয়ক প্রতিষ্ঠান শেয়ারট্রিপের সিইও সাদিয়া হক বলেন, ‘অনলাইনে হোটেল ও ট্যুর প্যাকেজের দাম তুলনা করে বুকিং দিলে খরচ কমানো যায়। স্থানীয় ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে অল্প খরচে অজানা স্থান ঘোরা যায়।’
২. বাজেট ও ভ্রমণ পরিকল্পনা
ভ্রমণের আগে কোথায়, কবে ও কজন যাবেন—এগুলো নির্ধারণ জরুরি। দূরপাল্লায় রাতের বাস বা ট্রেনে গেলে হোটেল খরচ বেঁচে যায়। কাজী শরীফ, যিনি ২০১৯ সালে ‘লো কস্ট ট্যুর বাংলাদেশ’ ফেসবুক গ্রুপ গড়েছিলেন, বলেন, ‘নন–এসি বাসে ভ্রমণ করলে ভাড়ার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাঁচানো যায়।’
৩. কম খরচে সেরা গন্তব্য
দেশে এমন অনেক স্থান আছে যেখানে অল্প খরচে ভ্রমণ সম্ভব—যেমন সাজেক, জাফলং, লালাখাল, কলমাকান্দা, সীতাকুণ্ড বা মহেশখালী। টোয়াব সভাপতি রাফেউজ্জামান বলেন, ‘ব্যাকপ্যাকারদের জন্য টাঙ্গুয়ার হাওর এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য। পরিবার নিয়ে সাশ্রয়ে ঘুরতে চাইলে শ্রীমঙ্গলও চমৎকার।’
৪. থাকার খরচে সাশ্রয়
দেশের প্রায় সব পর্যটন এলাকায় হোস্টেল, ডরমিটরি, গেস্টহাউস বা হোমস্টে সুবিধা আছে। স্থানীয় লোকজনের বাড়িতে থাকা বা দলগতভাবে ট্রলার ভাড়া করলে খরচ ভাগাভাগি করা যায়। কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিনে অক্টোবর–নভেম্বর বা ফেব্রুয়ারি–মার্চে গেলে হোটেল ভাড়া অর্ধেকে নেমে আসে।
বেসরকারি চাকরিজীবী তারিফ আশরাফ বলেন, ‘আমরা ১০–১২ জন মিলে ভ্রমণে যাই। দলগতভাবে গেলে গাড়ি বা নৌকা ভাড়া ভাগাভাগি করা যায়, এতে খরচ অনেক কমে।’
৫. খাবারে সাশ্রয়ের উপায়
ভ্রমণে স্থানীয় রেস্তোরাঁয় খেলে খরচ কমে, তবে খাবারের মানে ছাড় দেওয়া ঠিক নয়। স্থানীয় খাবার খেলে দাম কম পড়ে ও স্বাদও মেলে। ভ্রাম্যমাণ হোটেলগুলোতেও ৬০–১২০ টাকায় ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়।
ভ্রমণ চলচ্চিত্র নির্মাতা দিহান চৌধুরী বলেন, ‘স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে গেলে তাদের কাছ থেকে খাবার ও থাকার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। প্রয়োজনে শুকনা খাবার বা ইনস্ট্যান্ট নুডলস নেওয়াও ভালো উপায়।’
দেশের ভেতর ভ্রমণে সঠিক পরিকল্পনা, সময় বাছাই, দলগত যাত্রা ও স্থানীয় বিকল্প বেছে নিতে পারলে কম খরচে দেশজুড়ে ঘোরা সম্ভব—আর তাতেই বাড়বে ভ্রমণের আনন্দ ও অভিজ্ঞতা।
পূর্বের পোস্ট :