সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদাপাথরে’ আবারও পর্যটকের ভিড় বেড়েছে। তবে পর্যটকদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে ভাঙা ও কাটা পাথর।
ঢাকার মেহেদী হাসান কয়েক বছর পর আবার সাদাপাথরে ঘুরতে গিয়ে হতাশ হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তিন বছর আগে এসেছিলাম সাদাপাথরে। এখন সৌন্দর্যটা আর নেই। চারপাশে ভাঙা আর কাটা পাথর। হাঁটার সময় অসাবধান হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমার মনে হয় এগুলো সরানো দরকার।’
অন্যদিকে প্রথমবার ঘুরতে আসা ময়মনসিংহের পর্যটক তমাল শেখের অভিজ্ঞতা ছিল ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘অনেক সুন্দর জায়গা, গোলস করেছি পানিতে। আবার আসতে চাই।’
সরকার পরিবর্তনের পর গত ৫ আগস্ট ‘সাদাপাথরে’ ব্যাপক লুটপাট হয়। পরে প্রশাসনের অভিযানে উদ্ধার করা বিপুল পরিমাণ পাথর ধলাই নদীতে প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে পর্যটক কিছুটা বাড়লেও ‘ভাঙা-কাটা’ পাথর এখনো ঝুঁকি তৈরি করছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
ভাঙা পাথরে ঝুঁকি
নৌকাঘাট থেকে মূল স্পটে যেতে বালুচর আর পাথরের ওপর দিয়ে সতর্ক হয়ে হাঁটতে হয় পর্যটকদের। পানি কমে যাওয়ায় ভেসে উঠেছে ভাঙা পাথর। ফটোগ্রাফার আনোয়ার হোসেন সুমন বলেন, ‘ভাঙা পাথরগুলো পর্যটকদের জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ। প্রশাসনকে বলব এগুলো যেন দ্রুত সরানো হয়।’
জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘অর্ধেক ভাঙা পাথর প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। এগুলো আমরা ম্যানুয়ালি সরাব। পানি বাড়লেই কাজ এগোবে।’
বেড়েছে পর্যটক, বাড়েনি বেচাকেনা
নৌকাঘাটে আগের চেয়ে ভিড় বেশি দেখা গেছে। রেস্টুরেন্ট, দোকান ও ফটোগ্রাফারদের আনাগোনা বেড়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যটক বাড়লেও বেচাকেনা আগের মতো হয়নি। দোকানি লীলু মিয়া বলেন, ‘কিছুটা বিক্রি বেড়েছে, তবে আগের মতো নয়।’
নৌকা চালক জসীম মিয়া বলেন, ‘গত শুক্র-শনিবারে ১৬০টির বেশি নৌকা ট্রিপ দিয়েছে। পর্যটক বাড়লেও আগের অবস্থায় ফিরতে সময় লাগবে।’
প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগ
স্থানীয়রা বলছেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা পাথর কিনে নিয়ে দ্রুত ভেঙে ফেলার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শুরুতেই ব্যবস্থা নিলে এত ভাঙা পাথর থাকত না।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিন মিয়া জানান, ‘প্রশাসন ৩০ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে ১৬ লাখ ঘনফুট প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, বাকিগুলোও প্রতিস্থাপন করা হবে।’
ছয় পর্যটনকেন্দ্র নিয়ে মহাপরিকল্পনা
সরকার সিলেটের ছয়টি পর্যটনকেন্দ্র—সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি, উৎমাছড়া ও আরও কয়েকটি এলাকা উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বজলুর রশিদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সম্প্রতি এসব এলাকা ঘুরে দেখেছে।
বজলুর রশিদ বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাই মহাপরিকল্পনার মূল লক্ষ্য।’
জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম বলেন, ‘সিলেটকে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করতে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।’
পূর্বের পোস্ট :