ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের ডাকযোগে ভোট গ্রহণে বিশ্বব্যাপী অঞ্চলভিত্তিক নিবন্ধনের সময় বেঁধে দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিবন্ধন অ্যাপ চালু হলেই প্রবাসীরা জানতে পারবেন তাদের অঞ্চলের নিবন্ধন সময়সীমা।

ইসির তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা (আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং) বাস্তবায়নে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন এবং একই দিনে গণভোট আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এজন্য ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি।

এদিকে ১৮ নভেম্বর চালু হচ্ছে নিবন্ধন অ্যাপ। প্রবাসীদের নিবন্ধন, ব্যালট পাঠানো ও গ্রহণসহ সব কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইসির ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন (ওসিভি–এসডিআই)’ প্রকল্প।

প্রকল্পের টিম লিডার সালীম আহমাদ খান বলেন, “বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল আলাদা করে নিবন্ধনের সময় দেওয়া হবে। যেমন—দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়ার কিছু অঞ্চল… এভাবে ভাগ করা হবে।” প্রতিটি অঞ্চলের জন্য কমপক্ষে পাঁচ দিনের সময় নির্ধারণ করা হবে। অ্যাপ ডাউনলোড করলেই ব্যবহারকারী দেখতে পারবেন তার নিবন্ধন স্লট কোন তারিখ থেকে শুরু।

তিনি জানান, নিবন্ধন প্রক্রিয়া চার সপ্তাহের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ব্যালটে থাকবে প্রতীক, অ্যাপে জানানো হবে প্রার্থী তালিকা

নিবন্ধনের পর প্রবাসীদের ঠিকানায় ডাকযোগে ব্যালট পাঠাবে ইসি। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ব্যালট পাঠানো শুরু হবে, ফলে ব্যালটে প্রার্থীর নাম বা ছবি থাকবে না—শুধু প্রতীক থাকবে। প্রতীকের পাশে দেওয়া ঘরে টিক বা ক্রস দিয়ে ভোট দিতে পারবেন ভোটাররা।

প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর অ্যাপের মাধ্যমে প্রার্থীর নাম-ছবি দেখা যাবে। এরপর ভোটার ব্যালটে প্রতীকে চিহ্ন দিয়ে তা দেশে পাঠিয়ে দেবেন।

প্রবাসী ভোটারের পাশাপাশি দেশের সরকারি চাকরিজীবী, ভোটগ্রহণে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কারাবন্দিরাও ডাকযোগে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

সম্ভাব্য ভোটার সংখ্যা ও বাস্তবতা

• দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি থাকলেও ভোটারসংখ্যার সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই।

• দেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৪ লাখের বেশি—অনেকে নিজের এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন না।

• নির্বাচনকাজে নিয়োজিত হবেন ৭–৮ লাখ নিরাপত্তাসদস্য ও ৯–১০ লাখ কর্মকর্তা।

• আইনি হেফাজতে (কারাগারে) আছেন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ।

তবে প্রবাসীদের সাড়া কেমন পাওয়া যাবে—এ বিষয়ে নিশ্চিত নয় ইসি। সালীম আহমাদ খান বলেন, “আন্তর্জাতিকভাবে অনলাইন ভোটিংয়ে সাড়া বেশি পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রেও নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।” তিনি জানান, ৫০ লাখ ভোটার ধরেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

জেলখানায় বুথ, প্রচার বাড়ানোর পরিকল্পনা

দেশের তিন শ্রেণির ভোটার—সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং কারাবন্দিদের—ঠিকানার ভিত্তিতে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হবে। জেলখানায় ভোটের জন্য বুথ স্থাপনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সম্পন্ন হয়েছে।

সালীম আহমাদ জানান, মানুষের কাছে পোস্টাল ব্যালটের তথ্য পৌঁছাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পোস্টার, কিউআর কোডভিত্তিক যাচাইকরণসহ নানা ধরনের প্রচার চালানো হবে। প্রবাসীদের সহায়তা দিতে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর অঞ্চলভিত্তিক ভাগ করার পরিকল্পনাও চলছে।