প্রথমবারের মতো পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি এবারের ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কপ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে শুধু দুই-একটি মন্ত্রণালয় দিয়ে বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশ নিজের ন্যায্য দাবি তুলে ধরতে পারবে না বলে মনে করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত মঙ্গলবার ‘বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০: প্রস্তুতিমূলক কর্মশালা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন, “সবাই ভাবে কপ মানেই পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাজ। এর সঙ্গে মৎস্য, শিক্ষা, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। এক মন্ত্রণালয় দিয়ে কোনোভাবেই কপের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায় না।”
উপদেষ্টা জানান, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-এর উদ্যোগে এবারই প্রথম কপ সম্মেলনে যাচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এবারের কপ সম্মেলনে জলবায়ু সংকট কীভাবে দেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, সেই বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
শুধু মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার সমন্বয়হীনতা নয়, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মধ্যেও সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “এবারের কপে আমাদের ভুলে যেতে হবে কে সরকারের পক্ষ থেকে এসেছে, আর কে বেসরকারি সংস্থা থেকে এসেছে। আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশ।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত পরিবেশবিদ ও এনজিও কর্মকর্তারা অভিযোগ করে বলেন, ভূটান-ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো কপ সম্মেলনে নিজেদের প্যাভিলিয়ন যেভাবে সাজায়, সেখানে বাংলাদেশের উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে জায়গা পাবে ইলিশসহ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মতো দেশীয় প্রাণিজ সম্পদের তথ্য ও ছবি। জলবায়ু সমস্যা কীভাবে দেশের মৎস্য ও প্রাণিজ সম্পদে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, তা বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে ফুটিয়ে তোলা হবে,” আশ্বাস দেন উপদেষ্টা।
এছাড়া এবারের কপে সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ের ওপর আলাদা গুরুত্ব আরোপ করেন উপদেষ্টা। শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এত দিন বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে সুবিধা চেয়ে আসলেও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের দ্বারপ্রান্তে এখন কতটা ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’ পাওয়া যাবে, তা অনিশ্চিত।
ভিকটিম রোল প্লে করে আমাদের কাজ হবে না। যেটা আমাদের ন্যায্য দাবি, সেই ক্ষতিপূরণ শক্তভাবে চাইতে হবে,” বলেন উপদেষ্টা।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কপ সম্মেলনে বড় রকমের সমন্বয়হীনতা আছে। শুধু দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও এখনো জোটবদ্ধভাবে দাবি তোলার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সে তুলনায় আফ্রিকার দেশগুলো জোটবদ্ধভাবে কপে নিজেদের অবস্থান জানাচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা।
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে দেশে ক্যাপচার ফিশ খাত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আগে ৬০ শতাংশ মাছের চাহিদা ক্যাপচার ফিশ থেকে আসলেও এখন তা ২০ শতাংশের বেশি কমে গেছে বলে জানান উপদেষ্টা।
বড় দেশগুলো ভাবছে, তারা জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের আওতায় পড়বে না। অথচ এখন আমেরিকাতেও বন্যা হচ্ছে। এর বড় কারণ জলবায়ু সংকট। সবাইকে এই সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে,” আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের।
পূর্বের পোস্ট :