জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে নতুন টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ এসব প্রস্তাবকে দলীয় পুনর্গঠনের সুযোগ হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে বলছেন—এটি দলের আদর্শ ও আন্দোলনকে দুর্বল করার কৌশল।
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানাচ্ছেন, কমিশনের প্রস্তাব ‘অযৌক্তিক’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’। অন্যদিকে, সংস্কারপন্থি একাংশ মনে করছে, রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপিকে এখন ‘বাস্তবসম্মত সমঝোতার’ পথে হাঁটতেই হবে।
দলীয় অবস্থানে বিভক্তি
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কমিশনের প্রস্তাব সম্পর্কে বলেছেন, ‘এটি সরকারের ছক অনুযায়ী তৈরি, বিএনপিকে প্রান্তিক করার ষড়যন্ত্র।’
তবে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দলকে টিকিয়ে রাখতে হলে কিছু প্রস্তাব বাস্তবতার ভিত্তিতে বিবেচনা করা প্রয়োজন।’
সংস্কার বনাম আন্দোলন
দলীয় মহলে এখন মূল বিতর্ক—আন্দোলনের ধারায় থাকা নাকি রাজনৈতিক সমঝোতার পথে যাওয়া। তরুণ নেতাদের একাংশ বলছেন, ঐকমত্য কমিশনের কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়ন করলে ভবিষ্যতের নির্বাচনে অংশগ্রহণের নতুন পথ খুলবে।
অন্যদিকে আন্দোলনপন্থিরা বলছেন, এতে সরকারের ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে এবং দলের নীতিগত অবস্থান দুর্বল হবে।
কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে দ্বিধা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য যে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে দলীয় কাঠামোয় গণতন্ত্রায়ন, প্রার্থী নির্বাচনে স্থানীয় মতামত গ্রহণ, এবং সাংগঠনিক জবাবদিহি জোরদারের কথা বলা হয়েছে। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এসব প্রস্তাবের সমালোচনা করলেও সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেনি।
ভেতরের আলোচনায় চাপা উত্তাপ
দলীয় এক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘দল এখন এক সঙ্কটময় মোড়ে। আন্দোলনের চাপে থাকলে সংগঠন ভেঙে পড়বে, আবার সংস্কারে গেলে তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া আসবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, এসব বিষয় নিয়ে পরবর্তী স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব বিএনপির জন্য একধরনের ‘পরীক্ষা’। তারা মনে করেন, আন্দোলন ও নির্বাচনী রাজনীতির মধ্যকার এই দ্বন্দ্বই নির্ধারণ করবে দলের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা।
এক বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, ‘বিএনপি যদি বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারে, তাহলে তার সংগঠনগত ঐক্য আরও ভাঙবে।’
পূর্বের পোস্ট :