ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের দুর্যোগপ্রবণ ১৩ জেলার ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বড় ধরনের খাদ্যসংকটে পড়তে পারে। একই সময়ে ১৮টি জেলায় ১৬ লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের তিন সংস্থা ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট (এফপিএমইউ)।
বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি) প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানানো হয়। যৌথভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও ইউনিসেফ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্লেষণ করা জেলার ১৭ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এর মধ্যে কক্সবাজার ও ভাসানচর এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ খাদ্যসংকট ও জরুরি অবস্থায় পড়তে পারে।
খাদ্যঘাটতি, অপুষ্টি ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে মূল্যায়ন করা হয়েছে পাঁচটি ধাপে—স্বাভাবিক, চাপে থাকা, সংকটে থাকা, জরুরি অবস্থা ও দুর্ভিক্ষ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ধাপ–৩ বা খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৫৫ লাখ। ডিসেম্বর নাগাদ তা বেড়ে ১ কোটি ৬০ লাখে দাঁড়াতে পারে।
খাদ্যসংকটে পড়তে যাওয়া জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বান্দরবান, রাঙামাটি, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজার। প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, অর্থনৈতিক মন্দা ও জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাবে এসব জেলায় খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ‘আইপিসি প্রতিবেদনের সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করছি না। সমস্যা রয়েছে, তবে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা কমাতে কাজ করছে।’
অপুষ্টি বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিসেম্বরের মধ্যে ১৬ লাখ শিশু ও ১ লাখ ১৭ হাজার মা তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হতে পারেন। শুধু কক্সবাজার ও ভাসানচরেই ৮১ হাজারের বেশি শিশু ও ৫ হাজার মা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিতভাবে খাদ্যব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। স্থল ও জল—দুই উৎস থেকেই পুষ্টিকর খাদ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশু স্কুলে যেতে পারে না, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। তাই এখন শুধু পরিকল্পনা নয়, প্রত্যেককে দায়িত্ব নিতে হবে।’
এফএও বাংলাদেশের উপপ্রতিনিধি ডিয়া সানৌ বলেন, সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের মহাপরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান।
পূর্বের পোস্ট :