জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে ছয় দফার রূপরেখা তুলে ধরে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের দাবি করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির দাবি, গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংবিধান সংস্কারের পথ তৈরি হলে পরবর্তী নির্বাচনেই বেশকিছু কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন রূপরেখা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়।

এর আগে দিনের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা তার আগে গণভোট আয়োজনের আনুষ্ঠানিক সুপারিশ তুলে দেয়। পরে এনসিপি নিজস্ব রূপরেখা প্রকাশ করে।

বৈঠকে লিখিত রূপরেখা উপস্থাপন করে দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, ‘জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোয় গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের ভিত্তি তৈরি হবে। এর ফলে ফ্যাসিবাদি ক্ষমতা কাঠামো থেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের পথ সুগম হবে।’

রূপরেখা ঘোষণা অনুষ্ঠানে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ ও সারোয়ার তুষারসহ অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

রূপরেখায় এনসিপির ছয় দফা

প্রথম ধাপ:

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ, ২০২৫’ নামে একটি ‘অর্ডার’ জারি করবেন। দলটির বক্তব্য, এই অর্ডারের আইনিভিত্তি হবে গণঅভ্যুত্থান নিজেই; পুরোনো সাংবিধানিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করার প্রয়োজন হবে না।

দ্বিতীয় ধাপ:

পরবর্তী সংসদকে ‘কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার ডেলিগেট’ করতে গণভোট আয়োজন—তবে গণভোটে গণঅভ্যুত্থানের বৈধতা প্রশ্নে কোনো ভোটগ্রহণ হবে না। গণভোটে কেবল সংবিধান সংস্কার ক্ষমতা ন্যস্ত করার বিষয়টি থাকবে।

তৃতীয় ধাপ:

গণভোটের সুনির্দিষ্ট বিধান ‘বাস্তবায়ন আদেশ’-এর মধ্যেই নির্ধারণ করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশনকে বিধি বা প্রজ্ঞাপন জারি করার ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে।

চতুর্থ ধাপ:

পরবর্তী নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজন করতে হবে। যাতে নবনির্বাচিত সংসদ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কারের বাধ্যবাধকতায় থাকে।

পঞ্চম ধাপ:

সংস্কার করা সংবিধানের নাম হবে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, ২০২৬’। সেখানে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধান ব্রাকেটে উল্লেখ থাকবে। সাংবিধানিক পদধারীদের নতুন করে শপথ নিতে হবে।

ষষ্ঠ ধাপ:

সংবিধান সংস্কারের পর আদালতের ‘বেসিক স্ট্রাকচার ডকট্রিন’ অনুযায়ী সংশোধনী চ্যালেঞ্জ এড়াতে ২০২৬ সালকে নতুন সাংবিধানিক রেফারেন্স পয়েন্ট নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।

জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, ‘গণভোটে শুধু একটি প্রশ্ন থাকবে। জনগণের মতামত ছাড়া অর্ডারের টেক্সট চূড়ান্ত করা যাবে না। গণভোট পাস হলে এর বিরুদ্ধে নোট অফ ডিসেন্টের কার্যকারিতা থাকবে না।’

দলটির ভাষ্য, এ প্রক্রিয়া বিদ্যমান সংবিধানের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে ‘এক্সটা-কনস্টিটুশনাল’ পথ তৈরি করবে, যেটির মানে জনগণের ইচ্ছাই হবে প্রধান আইনগত ভিত্তি।