ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের প্রায় ২০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে ঢাকার বারিধারায় ট্রিপ্লেক্স বাড়ি এবং যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে ৫ লাখ ডলারে কেনা একটি বাড়িও রয়েছে।
দুদক বলছে, নজরুল ইসলামের বিপুল এই সম্পদের পাশাপাশি গুলশান, বসুন্ধরা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে আরও অনেক সম্পত্তির সন্ধান মিলেছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এসব তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে বলে সংস্থাটি জানায়।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম জানান, সোমবার নজরুল ইসলাম ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হলেও শেষ মুহূর্তে তিনি সই করতে অস্বীকৃতি জানান।
বর্তমানে পাঁচ দিনের রিমান্ডে থাকা অবস্থায় তার জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তিনি ঢাকার অন্তত ১০টি অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ নিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে ঢাকা বোট ক্লাব ও ঢাকা ক্লাবও।
গত ৩১ জুলাই দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির বাদী হয়ে নজরুল ইসলামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে ২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন। এছাড়া ২০২২ সালে গ্রাহকের ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগেও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি ও তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং ২০১৫ সালে ফ্লোরিডার ওয়েলিংটনে সাড়ে ৫ লাখ ডলারে একটি বাড়ি কিনেছেন।
এছাড়া তিনি ২০১৪ সালে ফারইস্ট লাইফের নামে ঢাকার তোপখানা রোডে ২০৭ কোটি টাকায় জমি কেনেন, যেখানে ‘২৮ কোটি টাকার ভাগ-বাটোয়ারা’ হয়। ওই টাকার মধ্যে নজরুল ইসলাম ৬ কোটি টাকা পান এবং বিক্রেতা আজহার হোসেন খানের সঙ্গে যৌথ ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে নিজের ও স্ত্রীর হিসাবে মোট ১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন, যা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
দুদক আরও জানায়, ফারইস্ট ইন্স্যুরেন্সের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এম এ খালেক ও তার ঘনিষ্ঠদের নামে ১১টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৫৯১ কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাৎ করা হয়, যেখানে নজরুল ইসলামও জড়িত ছিলেন বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে নজরুল ইসলাম জানান, বারিধারায় তার ৮ কাঠা জমির ওপর ‘পুতুল হাউজ’ নামে একটি ট্রিপ্লেক্স বাড়ি আছে, যা বিদেশিদের ভাড়া দেওয়া হয়। এছাড়া গুলশান-১ এ ভাসাবির পেছনে ৩,২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, বারিধারা ডিওএইচএসে ২,৮৪১ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং গুলশান-২ এ ৫ কাঠা জমির ওপর ২ তলা অফিস ভবন রয়েছে।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জের ভূলতা গাউছিয়ায় ‘প্রাইম শপ’ নামে ১৮ কোটি টাকার যৌথ সম্পদ, মাতুয়াইল ও যাত্রাবাড়িতে ২ কোটি টাকার সম্পদ এবং নিকুঞ্জে ‘পুতুল হাউজ’ নামে তিন কাঠার ডুপ্লেক্স বাড়িরও খোঁজ মিলেছে।
তিনি মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে কৃষিজমি কিনেছেন, আর বসুন্ধরার ‘জি’ ব্লকে ৩,৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট আয়কর নথিতে দেখানো আছে।
নজরুল ইসলামের নামে ফারইস্ট লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী সিকিউরিটিজ, ফারইস্ট ইসলামী প্রোপার্টিজ, সিভিসি ফাইন্যান্স ও ফারইস্ট ফাইন্যান্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১৫–২০ কোটি টাকার শেয়ারও রয়েছে বলে দুদক জানিয়েছে।
নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ঢাকার তোপখানা রোডের একটি জমি ২০৭ কোটি টাকায় কেনাবেচার সময় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন এবং তা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেন।
পূর্বের পোস্ট :