শ’ খানেক টনের ভায়াডাক্ট যে রাবারের ওপর চেপে বসে থাকে, সেই বিয়ারিং প্যাড কীভাবে খসে পড়ে— এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
১৩ মাসের ব্যবধানে একই ধরনের দুর্ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সড়ক ও সেতু পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানও। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেও তখন প্রাণহানি ঘটেনি।
প্রকৌশলীরা বলছেন, বিয়ারিং প্যাড হলো নিওপ্রেন বা প্রাকৃতিক রাবার দিয়ে তৈরি এক ধরনের ভারবহনকারী উপাদান, যা সেতু বা উড়ালসেতুর পিয়ার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বসানো হয় কম্পন প্রতিরোধের জন্য। এর ভেতরে স্টিলের পরতও থাকে, যা রাবারের সঙ্গে মিলে কাঠামোর স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
সেতুর ‘কন্ডিশন সার্ভে’ ও বিয়ারিং প্যাড কাজের অভিজ্ঞ প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, “সেতু তৈরির সময় পিয়ারের ওপর বিয়ারিং প্যাড বসানোর জন্য বিশেষ সিট তৈরি করা হয়। কখনো আঠা দিয়েও সেটি স্থাপন করা হয়। যেহেতু এর ওপর শ’ টনের বেশি ওজন থাকে, তাই সচরাচর খসে পড়ে না।”
তিনি আরও বলেন, “বিয়ারিং প্যাড রাবার ও স্টিলের যৌগিক কাঠামো। এটি কম্পন শোষণ করে পিয়ারে পাঠায়, এক ধরনের ড্যাম্পারের মতো কাজ করে। দাম তুলনামূলক কম হলেও এর গুরুত্ব অনেক বেশি।”
মেট্রো লাইনের মতো নতুন স্থাপনায় এটি খসে পড়াকে ‘অস্বাভাবিক’ উল্লেখ করে মনিরুজ্জামান বলেন, “ভায়াডাক্টের নিচে কোনো গ্যাপ তৈরি হলে বা চাপের ভারসাম্য নষ্ট হলে এমনটা হতে পারে।”
রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার খামারবাড়ি এলাকায় মেট্রো লাইনের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে আবুল কালাম (৩৬) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়ার ঈশ্বরকাঠি এলাকার জলিল চোকদারের ছেলে।
বুয়েটের পুরাকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, “এখানে নিশ্চয়ই কোনো নির্মাণ ত্রুটি ছিল, যা সংশোধন করা হয়নি। পুরো কাঠামোর সেফটি অডিট করা জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “মেট্রোরেল নির্মাণে কনসালটেশনের জন্যই ১১০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সেই জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যদি ত্রুটি শনাক্ত না করে, তাহলে দায় তাদেরও এড়ানো যায় না। ভবিষ্যতে আরও প্রকল্প হবে— এই মৃত্যুর দায় কারও না কারও নিতে হবে।”
এক বছরের মধ্যে দুইবার এমন ঘটনা ঘটায় অধ্যাপক সামছুল হক মনে করেন, এখানে নিশ্চয়ই কারিগরি ত্রুটি রয়েছে। তিনি বলেন, “মেট্রো রেল এখনো ‘হানিমুন পিরিয়ডে’। এর মধ্যেই এমন দুর্ঘটনা মানে কাঠামোগত দুর্বলতা রয়ে গেছে।”
মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, “আগের দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটির সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। সব পিলার বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরিদর্শনও করানো হয়েছিল।”
তবে এ সময় উপস্থিত সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান প্রশ্ন তোলেন, “তাহলে এটা হলো কীভাবে?”
তিনি জানান, “এটা জাপানি ঠিকাদারদের নির্মিত। ঘটনাটি ‘ডিফেক্ট লাইবেলিটি পিরিয়ড’-এর মধ্যেই ঘটেছে। এবার যে তদন্ত কমিটি গঠিত হচ্ছে, তারা আগের প্রতিবেদনও পর্যালোচনা করবে।”
রোববারের দুর্ঘটনার পর পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পূর্বের পোস্ট :