জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি (বিএমবি) বিভাগের ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের (৫৪তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের ‘অন্ধকার ঘরে দাঁড় করিয়ে’ র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের (৫৩তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।

রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল (২১ নম্বর) হলের ৪০৩ নম্বর কক্ষে ঘটনাটি ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএমবি বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের প্রথমে রফিক–জব্বার চত্বরে ডাকা হয়। পরে তাঁদের শেখ রাসেল হলের ৪০৩ নম্বর কক্ষে যেতে বলা হয়। সেখানে প্রায় ২০ জন নবীন শিক্ষার্থী উপস্থিত হন।

কক্ষে প্রবেশের পর তাঁদের দুই সারিতে দাঁড় করানো হয়। মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে বলা হয় এবং দরজা–জানালাসহ কক্ষের সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট অন্ধকার ঘরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় নবীন শিক্ষার্থীদের। এ সময় তাঁদের বিভাগীয় নিয়মকানুন ও শৃঙ্খলা–সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন করা হয়।

একজন নবীন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা সবাই ভয় পেয়েছিলাম। দরজা বন্ধ, লাইট বন্ধ, সবাইকে সেনাবাহিনীর ট্রেনিংয়ের মতো দুই সারিতে দাঁড় করানো হয়েছিল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ কয়েকজন বড় ভাই রুমে ঢুকে লাইট জ্বালান।”

র‍্যাগিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইদ, তানভীর রহমান মুন, আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ, আবু তালহা রনি, রাজিব শেখ, ইয়ামিন খান হৃদয়, আবু সাইদ, জান্নাতুল আদন, আহমেদ আরেফিন রাতুল, রেজওয়ান ইসলাম রিফাত, তাসনিমুল হাসান জুবায়ের, রুম্মান, রাকিবুল হাসান নিবিড়, জাহিদুল ইসলাম এবং উশান্তা ত্রিপুরার বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বিষয়টি বিভাগীয় শিক্ষকদের জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, একটি অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলোচনা করার জন্যই নবীনদের ডাকা হয়েছিল। গরমের কারণে আলো নেভানো ছিল এবং পাশের কক্ষে পরীক্ষার্থী থাকায় শব্দ এড়াতে দরজা–জানালা বন্ধ রাখা হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনো এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি।

হল প্রশাসনের অবস্থান জানিয়ে ২১ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন বলেন, “আমরা হল সংসদের প্রতিনিধি, কিছু শিক্ষার্থী এবং স্টাফসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের হাতেনাতে ধরেছি। এটা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ। বিস্তারিত যাচাই করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করব।”

তিনি আরও বলেন, “পরবর্তীতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে দিকেও আমরা কঠোর নজর রাখব।”

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ঘটনাটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘র‍্যাগিং সংস্কৃতি’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীন ও নিরাপদ পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

বিএমবি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আশরাফুল হাসান বলেন, “বিভাগ থেকে আলাদা কোনো ব্যবস্থা না নিলেও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে যৌথভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

র‍্যাগিংয়ের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান জানিয়ে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, “ঘটনাটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। হল প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা বিষয়টির সত্যতা যাচাই করছে। প্রতিবেদন জমা পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

প্রক্টর জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং বন্ধে প্রশাসন বদ্ধপরিকর। এ ধরনের অপরাধ কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।