চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ৩৩ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে ইসলামী ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন, যোগাযোগ ও শিক্ষার মান উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহীম রনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র শিবিরের প্যানেলে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাদের ৫০ শতাংশই সংগঠনের বাইরের। বিভিন্ন জায়গা থেকে যোগ্য ও সেরা শিক্ষার্থীদেরকেই আমরা প্যানেলে যুক্ত করেছি।’
ইশতেহারে ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ ১২ মাসে ৩৩ সংস্কারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। নয়টি ‘ফোকাস পয়েন্ট’-এর মধ্যে রয়েছে— আবাসন, যাতায়াত, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, নিরাপদ ও সবুজ ক্যাম্পাস, সেশনজট নিরসন, অটোমেশন, শিক্ষা-গবেষণা ও ক্যারিয়ার উন্নয়ন, নারীবান্ধব পরিবেশ এবং কল্যাণমূলক কার্যক্রম।
আবাসন সংকট নিরসনে বিদ্যমান হলগুলোর সংস্কার ও সম্প্রসারণ, নতুন টিনশেড হল নির্মাণের মাধ্যমে অন্তত ১০ শতাংশ আসন বৃদ্ধি এবং বহুতল নতুন হল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ইশতেহারে। পাশাপাশি আসন বণ্টনে স্বচ্ছতা ও দ্রুততা নিশ্চিত করারও অঙ্গীকার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কটেজ ও মেসে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, পানি ও ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করে ভাড়া নির্ধারণে প্রশাসনের তদারকি দাবি করেছে জোটটি।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় শাটল ট্রেনের বগি বৃদ্ধি, প্ল্যাটফর্ম আধুনিকায়ন এবং দ্বিতীয় রেললাইন স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে ই-কার সংখ্যা বাড়ানো, শহরমুখী শাটল বাস সার্ভিস ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার শিক্ষার্থীদের জন্য সার্ভিস বাস চালুরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্যানেলটি।
শিক্ষার্থীদের খাদ্য নিরাপত্তায় সুলভ মূল্যে ‘ফুড সেল’ গঠন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হোটেল ও বাজার তদারকি, ক্যাফেটেরিয়া সংস্কার এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিতের ঘোষণা দিয়েছে তারা।
সেশনজট নিরসনে প্রতি বিভাগে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার কার্যকর, পরীক্ষার রুটিন ও ফল প্রকাশ ডিজিটাল ব্যবস্থায় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্যানেলটি।
নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়তে মাতৃত্বকালীন ছুটি, চাইল্ড কেয়ার কর্নার, ব্রেস্টফিডিং জোন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেলকে শক্তিশালী করা এবং সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার মান উন্নয়নে শ্রেণিকক্ষ আধুনিকায়ন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ডিজিটাল করা, গবেষণা বৃত্তি বৃদ্ধি, রিসার্চ ফেস্ট আয়োজন ও বিদেশি স্কলারশিপে সহযোগিতার পরিকল্পনাও রয়েছে ইশতেহারে।
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ‘মেন্টাল হেলথ কাউন্সিল’ গঠন ও অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট নিয়োগের উদ্যোগের কথাও বলা হয়েছে।
নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে প্রবেশপথে সিসিটিভি স্থাপন, রেলগেটে পুলিশ বক্স ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে পার্টটাইম ‘নিরাপত্তা ফোর্স’ গঠনের পরিকল্পনা দিয়েছে প্যানেলটি।
পাশাপাশি গ্রিন ক্যাম্পাস উদ্যোগ, প্লাস্টিকবিরোধী প্রচারণা ও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এছাড়া নিয়মিত চাকসু নির্বাচন আয়োজন, টিএসসি ও কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম নির্মাণ, লিগ্যাল এইড সেল গঠন, অ্যালামনাই সমন্বয় এবং অন-ক্যাম্পাস চাকরির সুযোগ তৈরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে তারা।
সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের জিএস প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব, এজিএস সাজ্জাত হোছন মুন্নাসহ অন্যান্য প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকসু, হল ও হোস্টেল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
পূর্বের পোস্ট :