বছরের শেষ প্রান্তে এসে নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপার কাজ শুরু হলেও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা সময়মতো বই পাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অভ্যুত্থানের পর পুরনো শিক্ষাক্রমে ফেরাসহ প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে গত বছরও বই ছাপা শুরু হয় ডিসেম্বরের দিকে, ফলে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হয়।
এবার সেই অভিজ্ঞতা থেকে সেপ্টেম্বরে বই ছাপা শুরু করার পরিকল্পনা করেছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির দরপত্র বাতিলের কারণে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই ছাপার কাজ শুরু হয় নভেম্বরের শুরুতে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে এবার প্রায় ৩০ কোটি বই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও এবতেদায়ী পর্যায়ের ২১ কোটি ৪৩ লাখ বইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। তবে এনসিটিবির কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, এ দেরির কারণে মাধ্যমিক পর্যায়ের সব বই বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া কঠিন হবে।
অন্যদিকে প্রাথমিক পর্যায়ের বই ছাপার কাজ অনেকটা এগিয়েছে। এনসিটিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, নভেম্বরের মধ্যেই উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিকের ৮ কোটি ৫৯ লাখ বই পৌঁছে যাবে।
তিনি বলেন, “মাধ্যমিক পর্যায়ের বই ছাপার প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বরে শুরু করার কথা ছিল, কিন্তু দরপত্র বাতিল হওয়ায় সময় পিছিয়েছে। নভেম্বরের শুরুতে কিছু প্রেস কাজ শুরু করেছে।”
এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মতিউর রহমান জানান, নবম শ্রেণির বই ছাপাতে প্রকাশকদের ৬০ দিন এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বইয়ের জন্য ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে চারটি প্রেস নবম শ্রেণির বই ছাপার কাজ শুরু করেছে।”
অন্যদিকে এবতেদায়ী বইয়ের ৪০ শতাংশ ছাপার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মতিউর রহমান।
এবারও শতভাগ বই ছাপার কাজ দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো করছে। যদিও ক্রয় কমিটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছিল, তবু কোনো বিদেশি সংস্থা দরপত্র জমা দেয়নি।
এনসিটিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, “সব বই দেশেই ছাপানো হচ্ছে। বিদেশি সংস্থা কেউ অংশ নেয়নি।”
তিনি জানান, আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে ‘গুণগত পরিবর্তন’ আনা হয়েছে—শব্দচয়ন ও বাক্য গঠনে নতুনত্ব আনার পাশাপাশি অংশীজনদের পরামর্শে কিছু বিষয় পুনর্গঠন করা হয়েছে।
নতুন শিক্ষাবর্ষে ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস, পাশাপাশি বাদ পড়ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ।
আসাদুজ্জামান বলেন, “অংশীজনদের মতামত ও জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির সুপারিশে জুলাই অভ্যুত্থান অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে এবং সাতই মার্চের ভাষণ বাদ দেওয়া হয়েছে।”
প্রাথমিক পর্যায়ের বই নভেম্বরের মধ্যেই উপজেলায় পাঠানো সম্ভব হবে বলে এনসিটিবি জানিয়েছে। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় কাটছে না।
পূর্বের পোস্ট :