দেড় শ বছরের ঐতিহ্য ফিরে আসছে ঢাকার নৌযাত্রায়। চলতি মাসেই ঢাকা থেকে বরিশাল নৌপথে চালু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী স্টিমার সার্ভিস। গত মে মাসে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ‘পিএস মাহসুদ’ নামের একটি স্টিমার সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার কাজ চলছে। সার্ভে, ফিটনেস রিপোর্টসহ আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে যেকোনো দিনই চালু হতে পারে স্টিমারটি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা জানান, শত বছরের পুরোনো হওয়ায় স্টিমারটির গতি এখন আগের মতো নেই। যেখানে অন্যান্য লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে আট ঘণ্টা লাগে, সেখানে স্টিমারে সময় লাগবে প্রায় ১০ ঘণ্টা।
প্রাথমিকভাবে এটি পর্যটক সার্ভিস হিসেবে সপ্তাহে এক দিন চলবে। প্রতি শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে বিকেলে বরিশালে পৌঁছাবে, এরপর ফিরতি যাত্রায় ঢাকায় ফিরবে। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশে প্রমোদভ্রমণের জন্যও ভাড়া নেওয়া যাবে স্টিমারটি।
ঐতিহ্যের নতুন সূচনা
দেড় শ বছরের বেশি সময় ধরে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের যাত্রায় স্টিমার ছিল নির্ভরতার প্রতীক। তবে ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সেবাটি বন্ধ হয়ে গেলে নীরবে শেষ হয় সেই ঐতিহ্য। চলতি বছরের মে মাসে বরিশাল সফরে গিয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন স্টিমার সার্ভিস পুনরায় চালুর ঘোষণা দেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্রিটিশ আমলে ১৮৮৪ সালে কয়লাচালিত প্যাডেল স্টিমার প্রথম চালু হয়। তখন স্টিমার চলত নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, মোরেলগঞ্জ হয়ে খুলনা পর্যন্ত। পরে ‘পিএস গাজী’, ‘পিএস মাহসুদ’, ‘পিএস লেপচা’, ‘পিএস টার্ন’, ‘পিএস সেলার’সহ বেশ কয়েকটি স্টিমার যুক্ত হয় বহরে।
প্রতিদিন চালুর দাবি
২০১৯ সাল থেকে যাত্রীসংকট ও নাব্যতার অভাবে স্টিমার চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। সর্বশেষ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বন্ধ হয়ে যায় ‘এমভি মধুমতি’ ও ‘এমভি বাঙ্গালি’র যাত্রা। এখন আবার সপ্তাহে একদিন সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রতিদিন চালুর দাবি উঠেছে।
বরিশাল যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলের প্রযুক্তিগত এই বিস্ময় শুধু যান নয়, সভ্যতার চিহ্ন। দেশের সবচেয়ে বড় নৌপথে প্রতিদিন অন্তত একটি স্টিমার চালু করতে হবে।’
বিআইডব্লিউটিসির পরিকল্পনা
বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিনে দুটি স্টিমারের পুনর্বাসনকাজ শেষ হয়েছে। সাজসজ্জার কাজ চলমান। সার্ভে ও ফিটনেস প্রক্রিয়া শেষে অক্টোবরের মধ্যেই একটি স্টিমার পর্যটক সার্ভিস হিসেবে যুক্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘শত বছরের পুরোনো স্টিমারগুলো এখন শক্তিহীন। যাত্রা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় প্রতিদিন চালানো সম্ভব নয়। আপাতত সপ্তাহে একদিন চলবে। তবে ঢাকার আশপাশে ভাড়া নিয়ে ভ্রমণের সুযোগ থাকবে।’
অতীতের স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে স্টিমার
ঝড়-বৃষ্টি, জোয়ার-ভাটা পেরিয়ে নির্ভয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিত যে জলযান, সেই স্টিমারের হুইসেল আবারও বাজবে বুড়িগঙ্গায়। বরিশালবাসীর কাছে এটি শুধু যাতায়াত নয়, জীবনের সঙ্গে মিশে থাকা এক আবেগ—যা এবার ফিরে আসছে নতুন আঙ্গিকে।
পূর্বের পোস্ট :